পুরুষের-স্বাস্থ্য



নিজস্ব প্রতিবেদন: অবহেলা বা উদাসীনতার ফলে রোগ বাধিয়ে নিয়ে সেটার চিকিত্সা করার চেয়ে আগে ভাগেই সতর্ক ভাবে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করিয়ে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানোটা প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। সুস্থ থাকলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানোর দরকার রয়েছে। আজ এই প্রতিবেদনে পুরুষদের কিছু অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যপরীক্ষার কথা উল্লেখ করা হল। এই পরীক্ষাগুলি যে কোনও পুরুষেরই ছয় মাস বা বছর খানেক পর পর করিয়ে নেয়া উচিত। যাঁদের বয়স ৪০ পেরিয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে বছরে অন্তত একবার ৫টি স্বাস্থ্যপরীক্ষা করিয়ে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
১) আপনার মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কতটা, প্রথমেই তার পরীক্ষা করতে হবে। রক্তচাপ পরীক্ষা করাতে হবে। ঝুঁকি বুঝতে ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম এবং লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করে নিন।
২) এ বার দেখে নেওয়া দরকার আপনার মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি কতটা! এর জন্যে ফ্লেক্সিবল সিগমোইডোস্কপি করিয়ে নিতে হবে। ফিকাল অকাল্ট ব্লাড টেস্ট (এফওবিটি), কোলনোস্কপি আর মোল স্ক্রিনিং করানোটাও খুবই জরুরি। যাঁরা ধূমপায়ী, তাঁদের জন্যে লো-ডোজ কম্পিউটেড টমোগ্রাফি করানো অত্যন্ত জরুরি। এ ছাড়া প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন এবং ডিজিটাল রেক্টাল করিয়ে নিতে পারলে ভাল হয়।
পুরুষের-স্বাস্থ্য
৩) শ্রবণজনিত কোনও সমস্যা রয়েছে কিনা তা-ও পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া দরকার। এর জন্যে অডিওগ্রাম পরীক্ষা করতে হবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যাবে শ্রবণজনিত কোনও সমস্যা রয়েছে কিনা বা অন্য কোনও সমস্যা রয়েছে কী না। সমস্যা থাকলে তার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪) দৃষ্টিশক্তি ঠিক আছে তো? নিশ্চিত হওয়ার জন্যে করিয়ে নিন চোখের পরীক্ষা। দৃষ্টিশক্তিতে কোনও সমস্যা বা দুর্বলতা আছে কিনা, তা জানা যাবে।
৫) ডায়াবেটিস ক্যান্সারের মতোই মারাত্মক একটি রোগ। ইদানীং ডায়াবেটিসের আক্রান্তের সংখ্যা যে ভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কতটা বা রক্তে গ্লুকোজের ভারসাম্য ঠিক আছে কী না তা পরীক্ষা করে জেনে নেওয়া উচিত।
এই পাঁচটি পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারলে আপনার শরীরের সার্বিক অবস্থা বুঝে নেয়া সম্ভব হবে সহজেই। এই স্বাস্থ্যপরীক্ষাগুলির রিপোর্ট হাতের কাছে থাকলে শরীরের কোনও সমস্যার পেছনে লুকিয়ে থাকা প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করা চিকিত্সকের পক্ষেও সহজ হবে।


-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------


পুরুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ১০ পরামর্শ
১. পুষ্টিকর খাবার : পুষ্টিকর খাবার দেহে উদ্যম জোগায় এবং বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় থাকা উচিত নিয়মিত সবজি, ফলমূল ও ফ্যাট ফ্রি খাবার।
২. ওজন : দেহের ওজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওজন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তাতে হৃদরোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো রোগের আশঙ্কা বাড়ে। তাই বডিম্যাস ইনডেক্স দেখে দেহের ওজন ঠিক রাখুন।
৩. নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন : সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রমে জড়িত থাকা প্রয়োজন। শারীরিক অনুশীলন বা পরিশ্রম না করা হলে তা দেহে নানা রোগের কারণ হতে পারে।
৪. ধূমপান বর্জন : ধূমপান ফুসফুসের রোগ ও স্ট্রোকসহ বিভিন্ন জটিলতার আশঙ্কা বাড়ায়। তাই ধূমপান বাদ দিন।
৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা : নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা রোগ নিরূপণের জন্য প্রয়োজনীয়। কোনো রোগ শুরুতেই ধরা পড়লে তা নিরাময় করা সহজ হয়।
৬. অ্যালকোহল বর্জন : অ্যালকোহল পানে বহু ধরনের ক্যান্সার ও উচ্চ রক্তচাপসহ শারীরিক নানা সমস্যা হয়। এসব সমস্যা থেকে দূরে থাকার জন্য অ্যালকোহল পান বাদ দেওয়া প্রয়োজন।
৭. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ : সুস্থভাবে বাঁচার জন্য মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্র ও ব্যক্তিগত জীবনের সঠিক ভারসাম্য রক্ষা প্রয়োজন।
৮. পর্যাপ্ত ঘুম : পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা হয়। এ ছাড়া ঘুমের অভাবে মুড খারাপ হয় এবং মানসিক বিপর্যয়ও ঘটতে পারে। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
৯. ঝুঁকিমুক্ত জীবন : প্রত্যেকেরই জীবনযাপনের নিজস্ব ধরন রয়েছে। আর এ কারণে প্রত্যকেরই নিজস্ব স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকতে পারে। এসব ঝুঁকি অনুধাবন করে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন।
১০. সর্বাগ্রে নিরাপত্তা : নিরাপদ ও সুস্থ থাকার জন্য কিছু নিয়ম রয়েছে, এগুলো পালন করা প্রয়োজন। যেমন মোটরসাইকেল চালাতে হেলমেট পরিধান, গাড়িতে সিটবেল্ট বাঁধা, নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার, হাত ধোয়া ইত্যাদি।

No comments:

Post a Comment